রক্তমাখা জামা নিয়ে যখন ফিলিস্তিনের শিশুরা জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে বাঁচার আর্তনাদ করেছিল তখনো আমরা ঈদের অানন্দে বিভোর ছিলাম।ঈদের নামাজ পড়ে আমরা যখন আত্মীজনের বাড়িতে আনন্দ চিত্তে বেড়াই তখনো ফিলিস্তিনে বাবারা সন্তানের লাশ কাধে নিয়ে কবরস্থানে দাফন করতে যায়।সেই করুণ হৃদয়বিদারক দৃশ্য বিশ্ব বিবেক নাড়া দেয়নি।সিরিয়াতে যখন পাশবিক নির্যাতন,গুলির অাঘাতে ঝাঁঝরা অবুঝ শিশুর বুক, তখনো আমরা আমোদ পূর্তিতে ব্যস্ত ছিলাম।আকাশে যখন বিমানের দেখা যেত তখন সিরিয়ার মা তার শিশুকে বুকে জড়িয়ে ধরে হায়েনাদের গুলি থেকে বাঁচানোর ব্যর্থ চেষ্টা করত।সিরিয়া,লিবিয়া, ইরাক, ফিলিস্তিন,আফগানিস্তান ও কাশ্মীরের অধিবাসীদের কাছে ঈদ কোন আনন্দের বার্তা দেয়না।কাশ্মীরের ভারতীয় হায়েনাদের পাশবিকতা আমাদের রক্তকরণ হলেও বিশ্ব মোড়লা ছিল নীরব দর্শকের ভুমিকায়।মা বোনদের ইজ্জত আব্রু যখন হায়েনারা কেড়ে নিল তখন কোমলমতি শিশুদরর ন্যায় মা বোনেরা কেঁদেছিল কিন্তু কেউ সাড়া দেয়নি তাদের আর্তসাদে।
নির্যাতিত, নিপীড়িত,অধিকার বঞ্চিত, মজলুম মানুষের দুঃখ উপলব্ধি করতে মহান অাল্লাহর পক্ষ থেকে করোনা এক অভিশাপের নাম।রাশিয়া,আমেরিকা চীন ইসরাঈলের তান্ডবে বিশ্বে নির্যাযিত মুসলমানের কার্বনডাইঅক্সাইডের নাম করোনা।গভীর রজনীতে নির্যাযিত মায়ের অশ্রু,শিশুর বুক ফাটা আর্তনাদ আজ করোনা হয়ে বিশ্ববাসীকে জানিয়েছে মুসলমানের রক্ত হেরে যায়না।রক্ত বৃথা যায় না।রক্ত করোনা হয়েই ছোবল মেরেছে হায়েনাদের।মুসলিম রমনীদের বন্দি করে যখন তাদের কে দিনের পর দিন ধর্ষণ করা হয়েছে তখন তাদের কান্না বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছেনি।গুরুত্ব দেয়নি মুনাফিক মুসলিম শাসক ও হর্তাকর্তারা। নির্যাতিত মা বোনের চোখের অশ্রু,অবুঝ শিশুর রক্ত,বৃদ্ধ পিতার জায়নামাজে অশ্রুসিক্ত দোয়া নিস্ফল হয়নি।
ভাইয়ের সামনে বোনের ধর্ষণ দৃশ্য,স্বামীর সামনে স্তীর নিথর দেহ,অবুঝ শিশুর বুকে গুলিতে ঝাঁঝরা হয়েছিল তখন তাদের বোবা কান্না আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছিল।তাদের কাছে ঈদ মানে স্বজন হারানোর কান্না,তাদের কাছে ঈদ মানে মা হারানোর বেদনাময় স্মৃতি।
আজ বিশ্বব্যাপি ঈদ এসেছে।লকডাউন চলছে দেশে।কাশ্মীরকে যখন লকডাউন করে রেখেছিল তখন তাদের অার্তচিৎকার আমরা বুঝিনি।এখন বুঝেছি লকডাউন মানে কি জিনিস।এখনও কাশ্মীরে নরপিশাচের হিংস্র থাবায় প্রাণ হারায় অাবাল বৃদ্ধ বণিতা। ফিলিস্তনের অাকাশে এখনো দেখা যায় দখলদার ইসরাঈলের নরপশুদের বোম বর্ষণ।মায়ের সামনে কোলের শিশুকে যখন হায়েনারা কেড়ে নিয়ে হত্যা করে তখন মায়ের বেঁচে থাকা নিরর্থক হয়ে যায়।চীনের উইঘুর মুসলমানের কাছে ঈদ মানে বোবা কান্না।বিশ্ব খুনিদের হাতে প্রাণ হারানোর শোকে মুহ্যমান সিরিয়া,লিবিয়া,কাশ্মীর,ফিলিস্তিন,ইরাক উইঘুর জনপদ।এই ঈদেও অনেকে স্বজন হারানোর ব্যথা অনুভব করবে।যারা মুসলমানদেরর পাখির মত গুলি করে মেরেছে তাদের স্বজন হারানোর ব্যথা বুঝতে না পারলেও করোনায় স্বজন হারানোর কারণে এই ঈদ তাদের কাছে হবে কান্নার।নির্যাতিত মুসলিম জনপদে ঈদে তারা স্বজনদের স্মরণ করে কাঁদে।তাদের কাছে ঈদ কান্নার।করোনায় জালিমদের একটি কথা বুঝিয়ে দিয়েছে স্বজন হারানো কষ্ট সহজে ভুলা যায়না।
আরব বিশ্বে রবিবার থেকে ঈদ।আর প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে সোমবারে ঈদ উদযাপিত হবে।এবারের ঈদ ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে করোনার কারণে।এই ঈদে ধনি গরিব সবাই গরিবের বেশে থাকবে।ঈদ উপলক্ষ্যে কেউ তেমন কেনাকাটা করতে পারেনি।করোনাকে ধন্যবাদ দিতে হয় বিশ্ববাসীকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্যে।মহান আল্লাহ তায়ালা অহংকারী বিশ্ব মোড়লদের চোখ থেকে করোনার মাধ্যমে অশ্রু ঝরিয়েছে।আজ যারা দেশ ও জনগনকে বাঁচাতে অসহায় হয়ে অশ্রু বন্যা বয়ে দিয়েছে তারা মুসলিম জনপদে রক্তের বন্যা বয়ে দিয়েছিল।নির্যাতিত মুসলমানের রক্ত তাদের চোখে অশ্রু হয়ে ঝরে পড়ছে।অসহায় মজলুম মুসলমানের হৃদয়নিংড়ানো ও অশ্রুসিক্ত দোয়া কখনো বৃথা যায়না।রক্ত ফিরে আসে কঠিন প্রতিশোধের নেশায়।করোনা নির্যাতিত মুসলমানের রক্ত যা করোনা হয়ে মাটির পৃথিবীতে জালিমদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতে এসেছে।পুরানো জামায় ঈদ যাবে অশ্রুসিক্ত নয়নে।কেউ কাঁদবে স্বজন হারানোর বেদনায়, কেউ বা কাঁদবে করোনা থেকে বাঁচতে।এবারের ঈদ আনন্দ নয়,বেদনাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে শেখাবে।
লেখকঃনুর আহমদ সিদ্দিকী,
No comments:
Post a Comment