মানুষ চরমোনাই কে গালি দিলে আমার খুব বেশি হাসি পায়।কারণ চরমোনাই একটি স্থানের নাম।বরিশাল কীর্তনখোলা নদীর তীরে অবস্থিত একটি ইউনিয়নের নাম চরমোনাই। এই ইউনিয়নটি বর্তমানে অান্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিতি লাভ করেছে সেখানকার পীর সাহেব এর কারণে।বিশেষ করে পীর মাশায়েখ, আলেম ওলামাদের নাম না বলে লোকে চরমোনাই হুজুর, চাটগামী হুজুর বাঁশখালী হুজুর তথা ঐ হুজুরের গ্রাম,ইউনিয়ন,থানা ও জেলার নামানুসারে তারা পরিচিত হয়ে উঠে।ঠিক তেমনি বরিশালের এই চরমোনাই ইউনিয়নটি দেশ ও দেশের বাইরে পরিচিত হয়েছে মাওলানা সৈয়দ ইসহাক রহ,মাওলানা সৈয়দ ফজলুল করিম রহ এবং বর্তমানে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম এর মাধ্যমে।এমন আরো অনেক আছে।যেমন মধুপুরের পীর সাহেব,ছারছীনার পীর সাহেব,বায়তুশ শরফের পীর সাহেব,ফুরফুরার পীর সাহেব।এগুলো পীর সাহেবদের নাম নয় বরং এলাকার নাম।সুতরাং সেসব নাম ধরে গালি দিলে ঐসব এলাকাকেই গালি দেওয়া হয়।
যেমন অনেক চরমোনাইর পীর সাহেব মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম কে ব্যঙ্গ করতে গিয়ে বলে,চর্মলীগ,চামড়া নাই,চর্মনাই।এসব দেখলে আমার বেশ হাসি পায়।কতটা মূর্খ হলে এসব ব্যঙ্গাত্মক উক্তি করে তা সহজেই অনুমেয়। চরমোনাই কোন দলের নাম নয়।এটি যাস্ট ইউনিয়নের নাম।ঐ এসব এলাকার পীর সাহেবদের কারণে এলাকার নাম পরিচিত হয়েছে।চরমোনাইর পীর সাহেব এর নেতৃ্ত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বর্তমানে দেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী দল যা মিডিয়া বলতে বাধ্য হচ্ছে।গত পরশু রেডিও তেহরানে দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুছ আহমদ এর সাক্ষাত নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেন।সেই রিপোর্টের শুরুতে তারা বলেছে,দেশের সর্ববুহৎ ইসলামী দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।অনেকে ভাবে যারা ইসলামী আন্দোলন করে তাদের পীর সাহেব চরমোনাই মুরিদ হতে হয়।সেটা ভুল ধারণা।আমি চরমোনাইর পীর সাহেবের মুরিদ নই।তাঁর দলের একজন কর্মী বটে।ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বা তার অঙ্গ সংগঠনে যোগ দিতে পীর সাহেবের মুরিদ হতে হবে না।যারা সুশাসন ও কল্যাণ রাষ্ট্র কায়েমের পক্ষে তাদের যে কেউ এই দলের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে।যখন ইচ্ছা যোগ দিতে পারে আবার যখন ইচ্ছা দল ত্যাগ করতে পারে।দলে যোগ দিতে নতুন মুসলমানের মত কালেমা পড়তে হয়না এবং দল ত্যাগ করলে মুরতাদ হয়ে যাবে এমন নীতিও এই দলে নেই।
বর্তমান বাংলাদেশে নীতি আদর্শে অটল ও অবিচল রয়েছে একমাত্র ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।এই দলের নেতা কর্মীরা অন্ধভক্ত বা দলান্ধ হওয়ার কোন সুযোগ নেই।কারণ দলের আমির সব সময় একটি কথায় বলে,আমি ভুল করলে আমাকে শোধরানোর চেষ্টা করবে। আমি যদি ভুল থেকে সংশোধন না হই তাহলে আমাকে ত্যাগ করা তোমাদের ওয়াজিব।কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতা কর্মীরাও তাই মনে করেন।ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির পীর সাহেব চরমোনাই যদি শরিঅাতের পরিপন্থী কাজ করে তাহলে সবাই তাঁকে বর্জন করতে বাধ্য হবে।এই মানসিকতা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সকল নেতা কর্মী অন্তরে লালন করে।এই কারণে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতা কর্মীরা দলান্ধ বা অন্ধভক্ত হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত দলটি এখনো তার নীতি আদর্শকে বিসর্জন দেয়নি।শুরু থেকে ইসলাম,দেশ ও মানবতার পক্ষে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে।
হয়তো আমাকেও অনেকে দলান্ধ উপাধি দিতে পারেন।কারণ আমি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দলের পক্ষে লিখি বা দলের নিউজ প্রচার করি।আওয়ামী লীগ,বিএনপি জামায়াত,জাতীয় পার্টির নিউজ মিডিয়া প্রচার করে।তাদের রয়েছে নিজস্ব মিডিয়াও।তাই তাদের কর্মীদের প্রচার না করলেই চলে।কিন্তু ইসলামী আন্দোলনের নিউজ কোন মিডিয়া তেমন প্রচার করেনা।নাই নিজস্ব কোন মিডিয়াও। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দলের প্রতিটি কর্মী মিডিয়ার ভুমিকা রাখে।আমাদের মিডিয়া না থাকার কারণে বাধ্য হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের দলের নিউজ নিজেদের প্রচার করতে হয়।এটাকে বলে দলের প্রতি অানুগত্য ও গভীর ভালোবাসা।অনেক ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ায় আওয়ামী লীগ বিএনপির চেয়ে ইসলামী আন্দোলনের প্রচারণা বেশি হয়।ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের অনেক প্রোগ্রাম ১ ঘন্টার ব্যবধানে সফল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায় কর্মীদের প্রচারণায়।অনলাইন অার অফলাইনে ইসলামী আন্দোলনের সরব প্রচারণা রয়েছে।
যেকোন দুর্যোগে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সবার আগে মাঠে নামে।ইসলামের বিরুদ্ধে,নবীর বিরুদ্ধে কটুক্তি করলে সবার আগে প্রতিবাদে রাজপথে নামে দলটি।তাসলিমা বিরুধি আন্দোলন,নাস্তিক্যবাদী শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন,সুপ্রীম কোর্টের সামনে মূর্তি স্থাপন করলে অপসারণের বিরুদ্ধে আন্দোলন,ভারতের টিপাইমুখে বাধ দিয়ে বাংলাদেশ কে মরুকরণের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে তিন দিন ব্যাপি লংমার্চ করেছিল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।মিয়ানমারে গণহত্যা বন্ধে আন্দোলন,রোহিঙ্গাদের সহায়তা প্রদান,ভারত, কাশ্মীর
,আমেরিকা,সিরিয়া,অাফগানিস্তান,ফিলিস্তিনে মুসলিম নির্যাতনের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আন্দোলন করে আসছে দলটি।সম্প্রতি বিশ্বমহামারী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে বাংলাদেশে শুরু থেকে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।সাংবাদিক,চিকিৎসকদের পিপিই,গ্লাফস, প্রদান,অসহায় দিন মজুরদের অার্থিক সহায়তা প্রদান।আলমদের গোপনে অার্থিক সহায়তা প্রদান,টেকনাপ থেকে তেতুলিয়া আর রূপসা থেকে পাথুরিয়া সর্বত্র অসহায় মানুষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ,দলের আমির পীর সাহেব চরমোনাইর নির্দেশে করোনায় মৃত ব্যক্তিদের দাফন কাফনের ব্যবস্থা,দেশ ব্যাপি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সমর্থিত চিকিৎসকদের নিয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদান,অসহায় দরিদ্র কৃষকদের পাকা ধান কেটে দেওয়াসহ বিভিন্ন সহায়তা করেই যাচ্ছে।তা স্বর্থেও হিংসুকরা বসে নেই।নিত্যনৈমিত্তিক রুটিনের মত ইসলামী আন্দোলনের উলঙ্গ সমালোচনা করেই যাচ্ছে।চরমোনাই কে গালি দিতে তাদের ভুল হয়না।ইসলামী আন্দোলন যতটা না নিজেদের চেষ্টায় পরিচিত লাভ করেছে এর চেয়ে বেশি প্রচার প্রসার হয়েছে হিংসুকদের নির্লজ্জ বিরোধিতার কারণে।
হিংসুকরা রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হয়ে পীর সাহেব চরমোনাই ও তার দল নিয়ে বিদ্বেষ চর্চা করে।তাদের বসাতে,হাটাতে, চলাতে শুধু ইসলামী আন্দোলনের বিরোধিতা।ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ যতই ভালো কাজ করেই যেভাবেই হোক ক্ষত বের করে নির্লজ্জ বিরোধিতা করবেই।সমালোচনা রাজনীতির অংশ এবংসাংবিধানিক।কিন্তু তাই উলঙ্গ বিরোধিতা রাজনৈতিক সংস্কৃতি হতে পারে না।এটা যাস্ট হিংসা,বিদ্বেষ বলা চলে।তারা এই চিন্তাতেই শুকিয়ে যাচ্ছে কেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দিন দিন উন্নতি করছে।উন্নতিদাতা যদি আরশে মালিক হয় তাহলে হিংসুকদের বিরোধিতায় কিছুই যায় আসেনা।তাই আসুন সবাই মিলে চরমোনাই কে গালি দিই।
লেখকঃনুর আহমদ সিদ্দিকী
No comments:
Post a Comment