শেখ নাসির উদ্দিন, খুলনা প্রতিনিধিঃ লবণের মূল্যবৃদ্ধির গুজবে খুলনা মহানগরীর বড় বাজারে লবণ বিক্রির দোকানগুলোয় কাড়াকাড়ি শুরু করেছে সাধারণ ক্রেতারা। হঠাৎ এত বেশি পরিমানে লবন ক্রেতা দেখে বিস্মিত বিক্রেতারাও। তবে প্যাকেটের গায়ে উল্লেখ করা মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছেনা।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সরেজমিনে এসব দৃশ্য দেখা গেছে। তবে বাজারের অপ্রীতিকর ঘটনা ও লবনের দাম নিয়ন্ত্রনে মাঠে রয়েছে খুলনা জেলা প্রশাসন ও পুলিশ।
জানা গেছে, গত সোমবার দিবাগত রাত থেকে খুলনায় লবণের কেজি ২০০ টাকা হবে এমন ‘গুজব’ ছড়িয়ে পড়ে। এ গুজবের কারণে মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বড় বাজারে লবণের ডিলার, পাইকারি বিক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতাদের দোকানে লবণ ক্রয়ের জন্য ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসন বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য মাঠে নামে। হঠাৎ করে এভাবে লবণ ক্রয়ের কারণে অনেক ডিলার বা পাইকারি ব্যবসায়ীরাও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
প্রশাসন বলছে, লবণের মূল্যবৃদ্ধির খবর পুরোটাই গুজব। কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ গুজব ছড়াতে পারে। ব্যবসায়ীরাও জানিয়েছেন, লবণের চাহিদামাফিক সরবরাহ রয়েছে। শিগগিরই দাম বাড়ার শঙ্কা নেই। গুজবকে কেন্দ্র করে এই হুলুস্থুলের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জনগণকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন।
তবে মুদি দোকানগুলোয় আসা প্রায় শতভাগ ক্রেতাই লবণ কিনতে দেখা গেছে। পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির মতো লবণের মূল্যবৃদ্ধির গুজবে কান দিয়েছেন তারা। উচ্চ শিক্ষিত-নিরক্ষর নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার ক্রেতা। কেউ কেউ অফিস ছুটি হওয়ার আগেই বের হয়েছেন লবণ কেনার উদ্দেশে।
বেলায়েত নামের এক লবন ক্রেতা বলেন, ‘গতকাল রাতে ঢাকা থেকে আমার এক আত্মীয় ফোন করে আমাকে জানিয়েছেন লবণের কেজি ২০০ টাকা হবে। তাই বাজার থেকে থেকে ১০ কেজি লবণ ক্রয় করেছি।’
এদিকে, শত শত লবণ ক্রেতার কারণে বাজারের পরিবেশ যখন ব্যাপক বিশৃঙ্খল হয়ে উঠছিল তখন বাজারে ছুটে আসেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি দল। এর নেতৃত্বে ছিলেন ডিসি নর্থ এহসান শাহ । তিনি লবণ বিক্রির দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে ক্রেতাদের উদ্দেশে হ্যান্ড মাইকে বলছিলেন, লবণের দাম বাড়েনি। আপনারা গুজবে বিভ্রান্ত হবেন না। অযথা কেউ বাড়তি লবণ কিনবেন না।
কিছুক্ষন পরে বাজার নিয়ন্ত্রনে আসেন খুলনা জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ ইউসুপ আলী ও নির্বাহী ম্যাজিট্রেট মো: মিজানুর রহমান। তারা পৌঁছে বড় বাজারের পরিস্থিতি সামলাতে ওয়েস্ট মেকড রোডে ক্রেতাদের প্রবেশ বন্ধ করে দেন। পরে তারা দোকানে দোকানে গিয়ে ক্রেতাদের বেশি লবন না কিনতে অনুরোধ করেন।
তারা বলেন, লবণের মূল্যবৃদ্ধির গুজবের কারণে বড় বাজারে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লবণ ক্রয়ের হিড়িক পড়ে যায়। খবর পেয়ে আমরা দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বাজারে ছুটে আসি। প্রত্যেক ডিলারকে বলে দিয়েছি পূর্বে তারা ব্যবসায়ীদের কাছে যে পরিমাণ লবণ বিক্রি করত এখন সেই পরিমাণ বিক্রি করতে হবে। এ ছাড়া খুচরা বিক্রেতাদেরকে ১ কেজি থেকে ২ কেজির ওপরে লবণ বিক্রি করতে নিষেধ করেছি।
বড় বাজারের কালী বাড়ী রোডের লবন ব্যবসায়ী পদ্মা সল্টের প্রধান নির্বাহী আব্দুর রহিম মোল্লা বলেন, পরিবহন ধর্মগটের কারনে পন্য খুলনায় আসতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে পাইকারী বাজারে লবনের মূল্য বৃদ্ধি না পেলেও খুচরা বাজারে দু’এক টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি ক্রেতাদের গুজবে কান না দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে লবন ক্রয় করার আহ্বান জানান।
খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, বাজার তদারকির জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গুজব প্রতিরোধে তিন জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। মহানগরীর বাজার তদারকির জন্য এই তিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করছেন। অনুরূপভাবে উপজেলা পর্যায়ে ইউএনওকে বাজার তদারকির জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
No comments:
Post a Comment