জনজীবন থেকে ধর্মকে বাদ দেওয়া অর্থে রাষ্ট্র ও ধর্মের পৃথকীকরণের ধারণা কখনোই ইসলামে ছিল না। এ পর্যন্ত মুসলমানদের জীবনে ইসলামের প্রভাব সুস্পষ্ট। তাদের জনজীবন ইসলামের শিক্ষা ও নির্দেশনা দ্বারা উদ্বুদ্ধ। ইসলাম ধর্ম ও রাজনীতির স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সচেতন।
ইসলামী চুক্তি/লেনদেনের পদ্ধতি (মুয়ামালাত) এবং ইবাদতকে আলাদা হিসেবে বিবেচনা করেছেন।
ইবাদত হচ্ছে অপরিবর্তনীয় ও প্রথাগতভাবে পালনের বিষয়। অর্থাৎ এখানে সত্যে পৌঁছার জন্যে যুক্তি যথেষ্ট নয়।
আর সাধারণ কল্যাণ অনুসন্ধানের ক্ষেত্র হলো মুয়ামালাত।ধর্মীয় নির্দেশনা, উদ্দেশ্য, মূল্যবোধ ও মূলনীতি অনুযায়ী পরিচালিত যুক্তিবোধের আলোকে সাধারণ কল্যাণ অর্জন করতে হয়।
মুয়ামালাতের ব্যাপারগুলো প্রতিনিয়ত বিকশিত ও পরিবর্তিত হচ্ছে। কিন্তু আকিদা, মূল্যবোধ ও সদগুণ সবসময়ই অপরিবর্তনীয়।
আমাদের দেশে সেক্যুলার ও ইসলামপন্থীদের মধ্যে বিতর্ক অাছে। উভয় পক্ষই একে অপরকে চরমপন্থী হিসেবে আখ্যায়িত করছে। এক পক্ষ রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ইসলাম সম্পর্কে তাদের বুঝজ্ঞানকে উপর থেকে চাপিয়ে দেয়ার পক্ষপাতি। আরেকটা পক্ষ রাষ্ট্র, শিক্ষাব্যবস্থা ও জাতীয় সংস্কৃতি থেকে ইসলামের প্রভাব উপড়ে ফেলতে আগ্রহী।
মুসলিম বিশ্বসহ পুরো বিশ্বে এখন একটা ধর্মীয় পুনর্জাগরণ চলছে।
এমন এক সন্ধিক্ষণে সংস্কৃতি ও শিক্ষাব্যবস্থা সংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় নীতি প্রণয়নে ধর্মের প্রভাবের বিরোধিতা করাটা অযৌক্তিক।
ইসলাম অভিজাতদের ধর্ম নয়, এটা গণমানুষের ধর্ম।
অামরা মনেকরি,রাষ্ট্রের পক্ষে নিরপেক্ষ থাকাটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপদসঙ্কুল ব্যাপার।
অনেকেই অবুঝমান হয়ে রাষ্ট ও ধর্মকে অালাদা করতে চায়।ধর্ম ও রাষ্ট্রের পৃথকীকরণ বলতে কি বুঝানো হচ্ছে, তার উপর নির্ভর করছে এটা গ্রহণযোগ্য নাকি বর্জনীয়।
ওহীর প্রত্যক্ষ বিষয় এবং প্রায়োগিক রাজনৈতিক বিষয়ের মধ্যকার পার্থক্য প্রাথমিক যুগের মুসলিমরা যেভাবে বুঝতেন সেভাবে যদি বিবেচনা করা হয় – অর্থাৎ রাষ্ট্র হচ্ছে একটা মানবীয় ব্যাপার, আর ওহী হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত – তাহলে তা ঠিক আছে। আর যদি একে ফরাসী ধারণা কিংবা মার্কসীয় অভিজ্ঞতার আলোকে ব্যাখ্যা করা হয়, তাহলে তা ভয়ানক বিপদজনক ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।
এই ব্যাখ্যা রাষ্ট্র ও ধর্ম উভয়ের জন্য ক্ষতিকর। রাষ্ট্র ও ধর্মের সম্পূর্ণ পৃথকীকরণের ফলে রাষ্ট্র মাফিয়াচক্রে পরিণত হবে, বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হয়ে পড়বে লুণ্ঠনবাদী, রাজনীতি হয়ে পড়বে প্রতারণা ও ভণ্ডামিপূর্ণ।
যা বর্তমানে আমাদের সামনে দৃশ্যত!!
পেঁয়াজের লাগামহীন দাম, ক্যাসিনোসহ নানা মাফিয়া কর্ম দিয়েই ধর্ম চর্চার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা যায়।
কিছু ইতিবাচক দিক ছাড়া বাকি ক্ষেত্রে পাশ্চাত্যে ঠিক এই ব্যাপারগুলোই ঘটেছে।বর্তমান রাজনীতি অল্প কয়েকজন অর্থনৈতিক দালালের খপ্পড়ে বন্দি। এরা প্রচুর অর্থের মালিক, অসংখ্য মিডিয়া তাদের হাতে। এসবের মাধ্যমে তারা রাজনীতিবিদদের নিয়ন্ত্রণ করে।
এই বিবেচনায় মানুষের জন্যে ধর্ম খুবই প্রয়োজনীয়। ধর্মের আধ্যাত্মিক ও নৈতিক নির্দেশনার ফলে মানুষ ন্যায় ও অন্যায়ের (হালাল ও হারাম) মধ্যে পার্থক্য করতে পারবে।
রাষ্ট্র ও রাজনীতি থেকে ধর্মকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হলে সবকিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া এবং সামাজিক সম্প্রীতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।
অতএব, মানুষের মুক্তি ও অধিকারের নিশ্চয়তা দিতে পারবে – এমন একটা ভারসাম্যপূর্ণ রাস্তা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।
সে মুক্তির অধিকার ও নিশ্চিয়তার পন্থা যদি ইসলাম হয় মন্দ কি!!
লেখক:-
শরিফুল ইসলাম রিয়াদ
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক সম্পাদক, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন।
No comments:
Post a Comment