বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার করা জামিনের আবেদনের ওপর আজ আপিল বিভাগে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে রাজনৈতিক অঙ্গনে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। আইনজীবীদের একটি অংশ বলছেন আজই জামিন পেয়ে মুক্ত হতে পারেন বেগম খালেদা জিয়া।
কয়েকটি যুক্তি সামনে এনে আইনজীবীরা বলছেন, মুক্তি পাওয়ার জন্য কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার যেসব শর্ত পূরণ থাকা প্রয়োজন এর সবকটি শর্তই পূরণ রয়েছে।
তারা বলছেন, নিম্ন আদালত খালেদা জিয়ার ওপর ইতোপূর্বে অবিচার করলেও দেশের সর্বোচ্চ আদালত এবার তার ওপর ন্যায়বিচার করবেন। এছাড়া, আদালতের আদেশে চিকিৎসাধীন থাকা, তাঁর বয়স, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সাবেক সেনা প্রধান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বিবেচনায় খালেদা জিয়া জামিন পাবেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রসঙ্গটি কূটনীতি ও রাজনীতিপাড়া থেকে শুরু করে সর্বমহলে আলোচনা হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ে দেশের চলমান অস্থিরতা, আওয়ামী রাজনীতিতে ক্যাসিনোসহ বড় বড় দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টিও রায়কে ঘিরে আলোচনায় আসছে।
এছাড়া, দলের চেয়ারপারসন এবার জামিন না পেলে বিএনপি কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছে। বিএনপির একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন খালেদা জিয়া আদালতের মাধ্যমে মুক্ত না হলে আন্দোলনের মাধ্যমেই তাঁকে মুক্ত করা হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘সরকার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তিও শীঘ্রই এগিয়ে আসছে। এমন প্রেক্ষাপটে সরকার চাইবে না দেশে অস্থিতিশীল ও অরাজকতা হোক’।
বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বলছেন, বিএনপি দীর্ঘ সময় আন্দোলন-সংগ্রামের বাইরে ছিল। এখন আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য লন্ডন থেকে তারেক জিয়ার নির্দেশনা রয়েছে। সম্প্রতি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বিভাগীয় পর্যায়ে সফর করে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
একটি সূত্রের দাবি, আজ খালেদা জিয়ার শুনানি পর্যন্ত আদালতের ওপর আস্থা রাখবে বিএনপি। যদি আজকেও খালেদা জিয়ার আবেদনের বিষয়টি খারিজ হয়ে যায়, তাহলে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য রাজনৈতিকভাবে চূড়ান্ত মোকাবিলায় রাজপথে নামা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকবে না।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, ‘এখন থেকে সমাবেশ করতে আর প্রশাসনের অনুমতি নেয়া হবে না।’ এ সময় দলের নেতাকর্মীদের সরকারের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টির জন্য প্রস্তুতি নিতেও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মহাসচিবের এই ঘোষণার পর বিএনপি হঠাৎ করেই চাঙ্গা হয়ে উঠে।
এমন অবস্থায় ধারণা করা হচ্ছে আদালত থেকে জামিন পেতে পারেন বেগম খালেদা জিয়া।
প্রসঙ্গত, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাষ্ট দুর্নীতি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা জামিনের আবেদনের ওপর আজ আপিল বিভাগে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। আপিল বিভাগের দিনের কার্যতালিকার ৮ নম্বরে রয়েছে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ শুনানি হবে।
সূত্র জানায়, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাষ্ট দুর্নীতি মামলায় গতবছর ২৯ অক্টোবর খালেদা জিয়াকে ৭ বছর কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত। এরপর এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন খালেদা জিয়া। একইসঙ্গে জামিনের আবেদন করা হয়। হাইকোর্ট গত ৩১ জুলাই জামিনের আবেদন সরাসরি খারিজ করে দেন। এই খারিজের রায়ের বিরুদ্ধে গত ১৪ নভেম্বর আপিল করেন খালেদা জিয়া। গত ২৫ নভেম্বর এই জামিনের আবেদন আপিল বিভাগে উপস্থাপিত হলে আদালত ২৮ নভেম্বর শুনানির দিন ধার্য করেন।
সুপ্রিম কোর্ট ও নিম্ন আদালত মিলে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এখন ১৭টি মামলা বিচারাধীন। এরমধ্যে দুটি মামলায় (জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাষ্ট দুর্নীতি মামলা) তার ১৭ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। এরমধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে করা আপিল আপিল বিভাগে বিচারাধীন। আর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাষ্ট দুর্নীতি মামলায় নিম্ন আদালতের ৭ বছরের সাজার বিরুদ্ধে করা আপিল হাইকোর্টে বিচারাধীন।
No comments:
Post a Comment